নেলসন ম্যান্ডেলার (Nailson Mandala) জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ই জুলাই, দক্ষিন আফ্রিকায়। তার পিতা ছিলেন খিম্বু উপজাতি গোষ্ঠির সরদার। ম্যান্ডেলা কৃষ্ঞাঙ্গদের জন্য নির্ধারিত স্কুল ফোর্ট হেয়ার কলেজে প্রাথমিক লেখাপড়া শেষ করে আইন শিক্ষার জন্য ভর্তি হন উইটওয়াটারস্ত্রান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।
দক্ষিন আফ্রিকার নেলসন মেন্ডেলা একজন সমাজ সংস্কারক এবং সংগ্রামি নেতা। তিনি জীবন ব্যাপি সংগ্রাম চালিয়ে এসেছেন জনগনের মুক্তি এবং স্বাধীনতার জন্য। দক্ষিন আফ্রিকার সংখ্যালঘিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গ শাসক গোষ্ঠি যে অমানবিক বর্নবাদী ভেদ-নীতি অনুসরন করে তারই বিরুদ্ধে তিনি অবিশ্রান্তভাবে সুদীর্ঘকাল দু:সাহসিক সংগ্রাম করে ফলপ্রসূ হয়েছেন।
বর্নবাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে তিনি তার যৌবনের মূল্যবান প্রায় ২৭ বছর কাটিয়েছেন শ্বেতাঙ্গদের কারাগারে। তবুও তিনি তার অবস্থান থেকে বিন্দু মাত্র সরে যান নি। শেষ পর্যন্ত দক্ষিন আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
সাড়া বিশ্ব তাকে একজন অবিসংবাদিত মহান নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে মোটেই কার্পন্য করে নি।
২২ বছর বয়সে তিনি এসেছিলেন জোহানেসবার্গে। সেখানের বিপ্লবি কর্মী ওয়াল্টার সিসুলুর সাথে তার পরিচয় ঘটে।
১৯৫২ সালে আইনজীবি হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। সেই সাথে তখন তিনি এভেলিনকে বিয়েও করেন। এভেলিন পেশায় ছিলেন একজন নার্স।
৫০দশকের দিকে নেলসন ম্যান্ডেলা সিসুলু এবং অলিভার ট্যাম্বোর সহচর্যে এসে শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন। পরবর্তিতে আফ্রিকার ন্যাশনাল কংগ্রেস এর অধিনে তারা সংগঠিত করতে থাকেন কৃষ্ঞাঙ্গ জনগোষ্ঠিকে। এ কারনেই নেলসন ম্যান্ডেলা শ্বেতাঙ্গ শাসকবর্গের চোখে পড়ে যান। ১৯৫৬সালে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে নেলসন ম্যান্ডেলা ও তার সহোযোগিদের বিচার শুরু করে শ্বেতাঙ্গ শাসকগোষ্ঠি। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটকে রাখা হয়।
এদিকে ১৯৫৮ সালে প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে উইনি নামের এক কৃষ্ঞাঙ্গ মহিলাকে বিয়ে করেন।
১৯৬২ সালে মেন্ডেলা আবার কারাবন্দি হন। এসময় তাকে ৫ বছরের জন্য কারাগারে প্রেরন করা হয়। ১৯৬৪ সালে নতুন নতুন অপরাধের ফিরিস্তি দিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করে। অথচ তার সত্যিকারের দোষ ছিল যে সে তার স্বদেশের মানুষকে ভালবেসেছে, এবং এর স্বধিকারের জন্য বর্জকন্ঠে আন্দলন করেছেন। তিন্তু শ্বেতাঙ্গ সরকারের চোখে তাদের ক্ষমতার লোভ এ বিষয়টিকে অপরাধ বলে মিথ্যা অপবাদ দেয়।
তবে শ্বেতাঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে সাড়া বিশ্ব থেকে নিন্দার ঝড় ওঠে। জাতিসংঘ দক্ষিন আফ্রিকার রাজধানী প্রিটোরিয়ার উপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাঞ্জা জারি করতে বাদ্ধ হয় এবং খেলাধুলা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে দক্ষিন আফ্রিকাকে বহিস্কার করা হয়। দীর্ঘ সংগ্রাম এ দীর্ঘ কারাবাস একদিন সফল হয়। দক্ষিন আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বোথা ১৯৯০ সালে তাকে মুক্তি দেয় এবং তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাড়ান। ১৯৯৪ সালের প্রথম দিকে দক্ষিন আফ্রিকায় একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হয়। তাতে নেলসন ম্যান্ডেলা নেতৃত্বাধীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বিচয় লাভ করেন, এবং সরকার গঠন করেন। দক্ষিন আফ্রিকায় এভাবেই বর্নবাদী আন্দলন সফল হয়।
ইতিমধ্যে ১৯৯২ সালে নেলসন মেন্ডেলা পরকিয়ার দায়ে তার স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলাকে তালাক দেন। সম্প্রতি বৃদ্ধ বয়সে তিনি আবার একটি প্রেম করেন আফ্রিকা মহাদেশের একজন প্রেসিডেন্টের বিধবা স্ত্রীর সঙ্গে। তাকে নিয়ে তিনি অনেক দেশ সফরও করেছেন। নেলসন মেন্ডেলা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বহু উপাধিতে ভুষিত হয়েছেন। তার রচিত “নো ইজি ওয়াক টু ফ্রিডম” প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে। তিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় স্বেস্ছায় ক্ষমতা ত্যাগ করেও পৃথিবীতে এক অনন্য নজীর তৈরি করেন। বর্তমান বিশ্বে তার সাথে তুলনা করা যায় এমন নেতা এখনও জন্মায় নি। তিনি ১৯৯৯ সালে রাজণীতি থেকে অবসর নেন। ১৯৯৩ সালে শ্বেতাঙ্গ নেতা ডাব্লিউ ডি ক্লারক এর সাথে তিনি য়ৌখভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন।
রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে তিনি আফ্রিকার এইডস রোগের ছড়িয়ে পরা রোধে কাজ শুরু করেন। তার এ মিশন ব্যাক্তিগত হিসেবে রুপ নেয় ২০০৫ সালে তার একমাত্র জীবিত ছেলে এ রোগে মারা যাওয়ার পর।
২০১০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলার আসরে শেষবারের মত তিনি জনমন্মুখে আসেন। সোয়েতের সেই স্টেডিয়ামের ৯০ হাজার দর্শক তাকে হাতে তালি দিয়ে স্বাগত জানায় সেদিন।
১৯৬৩ সালে বিচারের কাঠগড়ায় দাড়িয়ে তিনি বলেছিলেন-
“আমার সাড়া জীবন আমি উৎসর্গ করেছি আফ্রিকার জনগনের সংগ্রামের প্রতি, আমি লড়েছি শ্বেতাঙ্গ শোষনের বিরুদ্ধে,আমি ণড়েছি কৃষ্নাঙ্গ শোষনের বিরুদ্ধেও” তার দেয়া এ বক্তব্যটিই তার জীবন এবং দর্শনের সাক্ষ্য বহন করে।
তিনি ফুসফুসের সঙ্গে দীর্ঘ্য লড়াই শেষে ৪.১২.২০১৩ তারিখে পৃথিবীতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি জোগানেসবার্গে তার নিজ বাড়িতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
তার মৃত্যুতে আফ্রিকায় সপ্তাহব্যাপি শোক পালন করা হয়। ১৫ ডিসেম্বর তার শেষকৃত্য হয়।
তার মৃত্যুতে তার একজন ভক্ত যা বলেন-
তিনি নেই মনে হচ্ছে আর কোনো সুযোগও নেই। ধনিরা এখন আরও ধনি হবে। ভুলে যাবে আমাদের কথা।গরীবদের নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। আমাদের রাজনীতিবিদদের দেখুন, তারা মোটেই মাদিবার মত নয়।
এ বাক্য থেকেই বোঝা যায় তিনি গরীব অসহায়দের ছিলেন অভয়ের পাত্র।
তিনি নেই মনে হচ্ছে আর কোনো সুযোগও নেই। ধনিরা এখন আরও ধনি হবে। ভুলে যাবে আমাদের কথা।গরীবদের নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। আমাদের রাজনীতিবিদদের দেখুন, তারা মোটেই মাদিবার মত নয়।
এ বাক্য থেকেই বোঝা যায় তিনি গরীব অসহায়দের ছিলেন অভয়ের পাত্র।